রিপোর্টার্স ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক :
ইরান-ইসরাইল যুদ্ধবিরতির পর যখন পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত, তখন সতর্কতা আরও বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে দিচ্ছেন—এখন তেলআবিব গোপন যুদ্ধ এবং মনস্তাত্ত্বিক অভিযানে মনোযোগ দিতে পারে, যার লক্ষ্য হবে ইরানের ভেতরে অস্থিরতা সৃষ্টি করা।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছিলেন মেহর নিউজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান ও দখলদার ইসরাইলি শাসনব্যবস্থার মধ্যে যুদ্ধবিরতির পরবর্তী সময়ে আমাদের দেশের (ইরান) প্রায় সকল বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকেরা একটি বিষয় স্পষ্টভাবে তুলে ধরছেন: এই সময়কে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, ইসরাইলি শাসনব্যবস্থার অতীত ইতিহাস প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, বেআইনি ও প্রতারণামূলক কৌশলের মাধ্যমে তাদের অবৈধ স্বার্থ হাসিলের উদাহরণে ভরপুর। সহজ কথায়, ইহুদিবাদীরা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে এবং ইরানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবে—এমন কোনো ধারণা রাখা উচিত নয়। এই বাস্তবতা ইরানের সাধারণ জনগণ এবং কর্মকর্তারা দুজনেই ভালোভাবে বুঝেন।
তবে, ইসরাইলি আগ্রাসনের পরবর্তী সময়ে মনে হচ্ছে ইহুদিবাদীরা দুটি বড় ষড়যন্ত্রে মনোনিবেশ করেছে, যার প্রতি আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখা আবশ্যক।
প্রথমত, খুবই সম্ভাব্য যে এই শাসনব্যবস্থা ইরানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী তৎপরতা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে। অনেক পর্যবেক্ষক বিশেষভাবে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, ইহুদিবাদীরা ইরানের অভ্যন্তরে গুপ্তহত্যার মতো অভিযান চালানোর চেষ্টা করতে পারে। বছরের পর বছর ধরে এই শাসনব্যবস্থা বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে নিজেদের লক্ষ্য ও স্বার্থ অর্জনের জন্য মানুষকে শারীরিকভাবে নির্মূল করার পথে হেঁটেছে।
সুতরাং, এই বিষয়ে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে—বিশেষ করে যখন সম্প্রতি যুদ্ধ চলাকালে তারা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও গুপ্তচরদের ইরানের অভ্যন্তরে সক্রিয় করেছে, তখন বিষয়টি আরও গুরুতর।
দ্বিতীয়ত, ইসরাইলি শাসনব্যবস্থা মোটেও আশা করেনি যে তাদের আগ্রাসনের পর ইরানে জাতীয় সংহতি ও ঐক্য আরও জোরদার হবে। বাস্তবতা হলো, হামলার পর ইরানিরা এক কণ্ঠে দখলদার ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করেছে—তারা জানিয়ে দিয়েছে, প্রয়োজনে প্রাণ দেবেন, তবু দেশ শত্রুর হাতে তুলে দেবেন না। এমনকি ইরানের বাইরের বহু বিরোধী ব্যক্তিও এসময় ইরানের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
এখন ইহুদিবাদীরা এই ঐক্যবদ্ধ জাতীয় অবস্থানকে দুর্বল করতে চায়। তারা বিভ্রান্তিকর ও বিকৃত বর্ণনা ছড়ানোর মাধ্যমে সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রধান হাতিয়ার হবে প্রোপাগান্ডা—যার মাধ্যমে তারা ভ্রান্ত বার্তা ছড়াবে এবং জাতীয় স্বার্থের ক্ষতি করবে।
সুতরাং এই নতুন পর্যায়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে দখলদার শাসনব্যবস্থা ও তাদের প্রচারযন্ত্র ইরানের অভ্যন্তরে মতাদর্শগত ও সামাজিক বিভক্তি তৈরি করতে না পারে। যুদ্ধবিরতির পরও লড়াই চলছে—শুধু রণক্ষেত্র বদলেছে। এখন এই সংগ্রাম মনস্তাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পর্যায়ে অব্যাহত রাখতে হবে, এবং দখলদার ইসরাইলি শাসনব্যস্থার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে।